News update
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     
  • China calls for implementation roadmap for new finance goal     |     
  • New gas reserve found in old well at Sylhet Kailashtila field     |     
  • Revenue earnings shortfall widens in October     |     

নতুন ভ্যাট নীতিতে অর্থনীতি আরও ক্ষতির সম্মুখীন হবে 

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2025-02-09, 7:32am

img_20250209_072936-1b70e86ef9febe0434c6f5a8bc2d8fd71739064723.jpg




হোটেল, ওষুধ, সিমেন্ট, গ্যাস ও সিগারেট খাতসহ ভোগ্যপণ্য খাত থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। বছরপ্রতি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভ্যাট সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বৈশ্বিক মহামারির সময় বাদে গত এক দশকের মধ্যে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অধীনে থাকা ১০৯টি বড় প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট সংগ্রহ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৪০২ কোটি টাকা কমে ৩১,৫৭৮ কোটি টাকা হয়েছে। ফলে, বছরপ্রতি হিসেবে মোট ভ্যাট রাজস্ব কমেছে ৫.৪ শতাংশ।

একইভাবে, গত দুই বছর ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধিও বেশ ধীর হয়েছে। বিশেষ করে, গত ছয় মাসে সরকারের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প প্রত্যাহারের কারণে এ খাতের প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিকহারে কমে গেছে।

এলটিইউয়ের অধীনে থাকা ৯টি সিমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংগ্রহ চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৬ শতাংশের বেশি কমে গেছে। গত ছয় মাসে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় আমদানি পর্যায়েও কর আদায় কমেছে। দেশের ৩৪টি সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও খাত বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উৎপাদন প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

হসপিট্যালিটি (হোটেল) খাতেও গত ৬ মাসে ব্যাপক ধাক্কা লেগেছে। এলটিইউয়ের অধীনে থাকা ৫টি হোটেল থেকে ভ্যাট সংগ্রহ বছরপ্রতি হিসেবে ২৫ শতাংশ কমেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এছাড়া অর্থবছরের প্রথমার্ধে সাবান খাতে ভ্যাট সংগ্রহ কমেছে ১২ শতাংশ, ওষুধ খাতে কমেছে ১ শতাংশ ও গ্যাসে কমেছে ২ শতাংশ। এলটিইউ-ভ্যাটের তথ্য অনুযায়ী, একটি সাবান প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংগ্রহ প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে, যার পরিমাণ ৩৬ কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিত্য ভোগ্যপণ্য (ফাস্ট-মুভিং কনজ্যুমার গুডস - এফএমসিজি) বিক্রি ৫ শতাংশ কমে গেছে।

সিগারেট খাত থেকেও ভ্যাট সংগ্রহ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭১ কোটি টাকা কমেছে। তামাক খাত সরকারের সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী খাত এবং তিনটি প্রধান সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এলটিইউ-ভ্যাটের অর্ধেকেরও বেশি রাজস্ব আসে। এমনকি, গত বাজেটে উচ্চ করারোপ করা হলেও ভ্যাট সংগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

জ্যেষ্ঠ এনবিআর কর্মকর্তাদের মতে, উচ্চ করের কারণে ভোক্তারা ব্যয় কমাতে নিম্নস্তরের পণ্য গ্রহণ করছেন, যা রাজস্ব কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

খাত বিশেষজ্ঞদের মতে, সিগারেট খাতে ভ্যাট ও কর বৃদ্ধির ফলে পণ্যের বিক্রি ব্যাপকহারে কমেছে। ভ্যাট ও কর বৃদ্ধির ফলে ভোক্তারা অবৈধ বাজারের দিকেও ঝুঁকতে পারেন। বর্তমানে অবৈধ সিগারেট বিক্রির কারণে সরকার বছরে প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিম্নস্তরের সিগারেটের কর ৭৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৬ শতাংশ করা হয়েছে। বছরের মাঝামাঝি আরও একবার ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে, এই করের হার ৮৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সিগারেট খাতকে আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন করছে।

আরও ভ্যাট ও কর বৃদ্ধির ফলে পুরো খাত ভেঙে পড়তে পারে। যা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি বৈদেশিক বিনিয়োগ, সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ, কর্মসংস্থান, কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, পুঁজিবাজার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিএটি বাংলাদেশের হেড অব কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাবাব আহমেদ চৌধুরী বলেন, “সাম্প্রতিক করের তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরেছে; মাত্রাতিরিক্ত কর বৃদ্ধির ফলে সবসময় সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি হয় না। বরং, এই পরিবর্তন ব্যবসার পরিস্থিতি ও বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অবৈধ সিগারেট বাজার বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলবে।”

বর্তমানে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে ১৬ লাখ খুচরা বিক্রেতা, দেড় লাখের বেশি কৃষক, কারখানা শ্রমিক ও তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। আকস্মিক কর ও ভ্যাট বৃদ্ধি তামাক খাতকে সংকুচিত করে আনবে এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। একইভাবে, প্রতিটি খাতের সাথেই লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত; ফলে এভাবে কর বৃদ্ধির ফলে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নতুন ভ্যাট নীতি খাতগুলোর ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকেই ধারাবাহিক সঙ্কটের দিকে ধাবিত করবে। ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) মতো খাত বিশেষজ্ঞ ও দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নতুন এই ভ্যাট নীতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে করে তারা ব্যয়-সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ কমে যাবে। তারা সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খোলামেলা ও গঠনমূলক সংলাপে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেন এবং আর্থিক দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি, সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাম্প্রতিক নীতিগত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান। আরটিভি